এক দিনমজুর গরিব বাবার গল্প (১০০% কান্না চলে আসবে)
বাবারা কেমন হয় সেটি বাবা হওয়ার আগে বোঝা সম্ভব নয়, একজন বাবা তার সন্তানদেরকে ভালো রাখতে কি না করে? তার সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করে পরিবার পরিজনদেরকে সব সময় হাসি খুশি রাখতে। দুনিয়ার কোন বাবাই তার সন্তানদের অভাবে রাখতে চায়ন না, ঠিক এমনই একটি গল্প রচনা করেছেন কাব্যশৈল্পের অন্যতম লেখক মোঃ সাবিত আহমেদ🌻। আশা করি সাবিত ভাইয়ের রচয়িত আজকের দিনমজুর গরিব বাবার গল্পটি আপনার ভালো লাগবে। তাই ছোট গল্পটি শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইলো।
এক গরিব বাবার গল্প
হঠাৎ করেই ঢাকার ব্যস্ততম গুলিস্তান মোড়ে প্রচণ্ড রোদে হাঁপিয়ে উঠেছেন মিজানুর রহমান। সূর্যের তীব্র তাপে শহরের রাস্তাগুলো যেন আগুনের মতো জ্বলছে, আর এই ভয়াবহ গরমেও নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন, মিজানুর রহমান—একজন রিকশাচালক। তার প্রতিটি দিন একটি নতুন যুদ্ধক্ষেত্র, যেখানে তাকে লড়াই করতে হয় তার পরিবারের সুখ-শান্তির জন্য।
মিজানুরের দিন শুরু হয় ভোরবেলা, যখন শহরের অধিকাংশ মানুষ এখনও গভীর নিদ্রায়। তার পুরানো, জীর্ণ রিকশাটি নিয়ে তিনি বেরিয়ে পড়েন রাস্তায়। তার পিঠে রিকশার ভার এবং মনে এক গভীর সংকল্প—আজও তাকে সংগ্রাম করতে হবে, কারণ তার ছোট্ট ছেলে রিয়াদ মাদ্রাসায় পড়ে।
তার ছেলে রিয়াদকে উচ্চশিক্ষিত করার স্বপ্নই মিজানুরকে প্রতিদিন নতুন উদ্যমে রাস্তায় নামাতে বাধ্য করে। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, ধুলো-ময়লা মাথায় নিয়ে তিনি যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দেন। তার মুখে সবসময় হাসি, যদিও এই হাসির আড়ালে লুকিয়ে আছে অজানা কষ্ট আর অসীম ত্যাগ।
একদিন, প্রচণ্ড গরমে পুরো শহর যেন উত্তপ্ত লোহার মতো জ্বলছিল। মিজানুর তার রিকশা চালাচ্ছিলেন, হঠাৎ করে তার শরীরটা একটু ভারী লাগতে শুরু করে। চোখের সামনে অন্ধকার নেমে আসে, কিন্তু তিনি থামেন না। তার মন জানত, আজ যদি তিনি কাজ না করেন, তাহলে রিয়াদের মাদ্রাসার খাবারের টাকা জমা দিতে পারবেন না।
রিয়াদের মাদ্রাসার খাবারের টাকার শেষ দিন ছিল সেই দিন। মিজানুরের স্ত্রী কান্নাজড়িত কণ্ঠে ফোন করে বলেছিলেন, “আজ যদি টাকাটা না জমা দাও, রিয়াদ মাদ্রাসায় ভালোভাবে খেতে পারবে না।” মিজানুরের বুক ফেটে যায় কিন্তু তিনি হার মানেন না। তিনি আরও দ্রুত রিকশা চালাতে শুরু করেন, যেন তার চোখের সামনে শুধুমাত্র রিয়াদের হাসি ছাড়া আর কিছু নেই।
অবশেষে, ক্লান্ত শরীরে, মিজানুর যথেষ্ট টাকা জমা করতে সক্ষম হন এবং তা নিয়ে মাদ্রাসায় পৌঁছান। রিয়াদের চোখে আনন্দের ঝিলিক দেখে মিজানুরের সমস্ত কষ্ট নিমেষেই ভেসে যায়। তার মন যেন এক অদ্ভুত শান্তিতে ভরে ওঠে। সে মুহূর্তে মিজানুর বুঝতে পারেন, তার এই ত্যাগ এবং সংগ্রামের মূল্য কতটা গভীর।
খোলা চিঠি
প্রত্যেক বাবাই একটি নীরব বীর। তাদের হৃদয়ে লুকিয়ে থাকে এমন এক অদম্য শক্তি, যা সন্তানদের জন্য সবকিছু করতে প্রস্তুত। বাবারা তাদের সন্তানের জন্য সমস্ত বাধা অতিক্রম করতে প্রস্তুত, শুধু একটি হাসি দেখার জন্য। তাদের মুখের হাসির আড়ালে লুকিয়ে থাকে অজানা কষ্ট, নিঃশব্দ ত্যাগ। তাদের হৃদয়ে বাস করে অপরিসীম ভালোবাসা ও মহত্ত্ব, যা পৃথিবীর কোনো পরিমাপেই মাপা যায় না। বাবারা সত্যিই আমাদের জীবনের নায়ক।
বাবারা নিজেদের কষ্টের কথা কখনো প্রকাশ করেন না। তারা সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করেন, রাতের অন্ধকারে বিশ্রাম নেন, কিন্তু তাদের মন সবসময় তাদের সন্তানদের মঙ্গলের চিন্তায় ব্যস্ত থাকে। বাবা হলেন সেই মানুষ, যিনি নিজে কষ্ট সহ্য করে সন্তানদের জন্য সুখের ব্যবস্থা করেন।
বাবারা সত্যিই আমাদের জীবনের নায়ক, যারা নীরবে, নিঃশব্দে আমাদের জন্য সবকিছু করেন। তাদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা পৃথিবীর সবকিছু থেকে বেশি হওয়া উচিত।