বাস্তবতা নিয়ে গল্প (ধূসর স্মৃতি)😅😔 [৩ মিনিটে পড়ুন]
(ধূসর স্মৃতি) আজকের গল্পটি রচনা করেছে মোহাম্মদ ইউসুফ খন্দকার, আশা করি এই গল্পটি তোমাদের খুব ভালো লাগবে, কারণ এই গল্পটিতে স্বামী স্ত্রীর এক অসমাপ্ত ভালোবাসার জীবন বৃত্তান্ত ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। তাই বলব একটু কষ্ট করে পুরো গল্পটি শেষ পর্যন্ত পড়বে।
বাস্তবতা নিয়ে গল্প (ধূসর স্মৃতি)
শীতলক্ষ্যা নদীর দুইধারে চলমান লোকালয়। নদী-বন্দর,কল-কারখানা, গার্মেন্টস-ফ্যাক্টরি আর লোক সমাজ নিয়ে এক ব্যস্ততম শহর। আছড়ে পড়া ঢেউয়ের মতোই এখানকার নগর জীবন। কখনো মৃদমন্দ হিমেল বাতাসে মনজুড়ালো পরিবেশ আবার কখনো বা ক্ষুদার্থ চেহারায় হা করে থাকা বিক্ষুব্ধ জলতরঙ্গের ভয়ধরালো আওয়াজ। তবু্ও এই নগরের মানুষগুলো যখন চার দেয়ালের ভিতর আবদ্ধ থেকে উদভ্রান্ত হয়ে যায় তখনি ছুটে আসে এখানে, শীতল বাতাস গায় মেখে শান্ত করে তুলে অপ্রসন্ন মনকে।
খালিদও আজ ছুটে এসেছে এখানে। নদীর তীরে বসে পানির স্বচ্ছতায় মেলে দিয়েছে ভাবনার ডানা। আজ নদীটা বেশ নীরব। এই খসড়া নদীর মতোই কত মানুষের জীবন। ফেলিন। তরঙ্গায়িত। অনন্ত সামনে বয়। চলার পথে অচেনা কতজনের সাথে সাক্ষাৎ হয়। পরিচয় হয় কতভাবে! সে পরিচয় কখনো ঘনিষ্ঠতায় পরিনত হয়। সৃষ্টি হয় হৃদ্যতা, আন্তরিকতা। বাঁধা পড়ে মায়ার সুতোয়। ভাবি মায়ার বাঁধনে একসঙ্গে কাটিয়ে দিবো আজীবন।
কিন্তু একসময় বাধঁন ছিন্ন করে সামনে চলতে হয়৷ পিছনের সবটাই হয়ে যায় ধূসর স্মৃতি। সেই স্মৃতিই চলার পথের বাঁকে বাঁকে দুঃখ দেয়। বাঁধা দেয় স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে। যদি পেনসিলের দাগের মতো স্মৃতিও মুছা যেতো তাহলে হয়তো পৃথিবীর বহু মানুষ জীবনের ভিন্ন মানচিত্র আঁকতে পারতো।
কথা গুলো ভাবতেই খালিদের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসে দুঃসহ এক দীর্ঘশ্বাস।
খালিদের জীবনেও জন্ম নিয়েছে কিছু অমৃত স্মৃতি যা ক্ষণে ক্ষণে বেদম বেদনা দেয় তাকে। খালিদ তখন পড়াশোনা শেষ করে মাত্র চাকরিতে যুগ দিয়েছে। বৃহস্পতিবার ছুটিতে বাড়ি এসে শুনে পারিবারিক ভাবে তার বিয়ের জন্য মেয়ে ঠিক করা হয়েছে। প্রথমে খালিদ ভীষণ রাগ করে। এতো দ্রুত বিয়ে করা তার ইচ্ছে ছিল না।
কিন্তু পরদিন যখন মায়ের জোড়াজুড়িতে মেয়ে দেখতে গেলো তখন মেয়েটির দীর্ঘ কালো চুল আর টানাটানা চোখ দেখে এক প্রকার প্রেমে পরে যায় সে। মা যখন জানতে যায় মেয়ে পছন্দ হয়েছে কিনা? তখন খালিদ লজ্জার বাঁধ ভেঙ্গে বলে উঠে আমি তাকে ছাড়া বিয়েই করবো না।
এরপর এক সাপ্তাহের মধ্যেই বড়সড় আয়োজন করে বিয়ে হয় খালিদ আর মাইশার। মাইশা ছিল বেশ বুদ্ধিমতি ও মায়াবতি নারী। তার ভালোবাসা আর সহানুভূতির সোপান পেয়ে খালিদের জীবন ভরে উঠে সুখ-শান্তিতে। সময়ের ব্যবধানে মাইশার প্রতিও বাড়তে থাকে খালিদের অকৃতিম ভালোবাসা। অফিসে গেলে একবার তাকে দেখাবে বলে হৃদয় ব্যকুল হয়ে আকুলতা করতে থাকে। দিন শেষে তার বুকে মাথা রাখলে খালিদের সমস্ত ক্লান্তি উড়ে যেতো ফানুস হয়ে।
তাদের এই সুখময় সংসারের দুবছরের মাথায় জন্ম হয় এক ফুটফুটে কন্যা সন্তান। তার অবাহ চাহনি আর মুগ্ধ করা নিষ্পাপ হাসি বাড়িয়ে দেয় সুখের মাত্রা। এইভাবেই একে একে কেটে যায় প্রায় পাঁচ বছর।
এরই মধ্যে একদিন মাইশার রক্ত বমি হয়। খালিদ ভীষণ ভয় পায় আর দ্রুত মাইশাকে হসপিটালে নিয়ে গেলো, কিন্তু কোনো রোগ ধরা পরে না মাইশার। এরপর আবার একাধারে তিন দিন বমি হলে খালিদ স্ত্রীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যায়। সেখানে মাইশার ব্লাড ক্যান্সার ধরা পরে। দুঃসংবাদটা শুনে খালিদ একেবারেই ভেঙে পড়েছিল। গুছানো জীবনের সবকিছুই উলটপালট হয়ে যায়। সময়ের পালাবদলে মাইশাকে হারানোর সম্ভাবনা বাড়তে থাকে খালিদের৷
তবু্ও সে প্রতিনিয়তই এগিয়ে যেতে থাকে হারিয়ে ফেলার কঠিন বাস্তবতাকে সঙ্গী করে। আকস্মিক সেই সম্ভাবনাই একদিন রূপ নেয় বাস্তবতায়। মাইশা দুঃখদের সাথে সন্ধি করে হারিয়ে যায় না ফেরার দেশে। রুখে দাঁড়ায় খালিদের জীবন যাত্রার দূরন্ত গতি। থমকে যায় সব কিছু। ইতি ঘটে তার সুখময় সংসারের।
মাইশার রেখে যাওয়া একমাত্র স্মৃতি তাদের মেয়েকে বুকে লালন করে খালিদ পাড়ি দিতে থাকে জীবন নামের দুঃখ নদী। সময়ের পালা বদলে কেটে যায় আরো তিনটি বছর। খালিদকে পরিবার থেকে দ্বিতীয় বিয়ে করার জন্য ভীষণ জোড়াজুড়ি করে কিন্তু খালিদ রাযি হয় না তাতে। বাকি জীবনটা মাইশার রেখে যাওয়া স্মৃতি নিয়েই কাটিয়ে দিতে চায়।
পরে আবার মেয়ের কথা চিন্তা করে বিয়ে করতে বাধ্য হয় সে। দ্বিতীয় বিয়ে করা স্ত্রীও বেশ বিচক্ষণ মেয়ে। সব সময় খালিদকে ভালোবাসায় ভুলিয়ে রাখতে চায় সকল দুঃখ- বেদনা। কিন্তু মায়ের চেহারার অনুকূলে জন্ম নেয়া মেয়েটির দিকে তাকালেই খালিদের মনে পড়ে মাইশার স্মৃতিগুলো আর তখনই স্মৃতিরা এসে কাড়া নাড়ে বেদনার দরজায়।